পিছাতে পারে মেয়েশিশুদের এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি
এবারের একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে, "আপনার কিশোরী কন্যাকে একটি এইচপিভি টিকা দি"।হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী একটি ভাইরাস।গত ২০১৬ সালে সরকারিভাবে গাজীপুর এ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজারের মতো ১০ বছর বয়সী মেয়েশিশুকে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা প্রদান হয়েছিল।গত ছয় মাসের মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পটি কাজ শেষ হলেও এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিটি আর বিস্তৃত কখনও হয়নি।
দীর্ঘদিন পর গত বছরের ১২ই মার্চ এইচপিভি টিকার জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বাংলাদেশকে অনুমোদন দিয়েছিল।এই বছরের জুলাই মাস থেকে সারা দেশজুড়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও করোনায় তা পিছাতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)।
জরায়ুমুখের ক্যানসার এর সচেতনতায় গঠিত "মার্চ ফর মাদার" (জননীর জন্য পদযাত্রা) নামের মোর্চায় ক্যানসার, নারী স্বাস্থ্য ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ১৭টি বেসরকারি সংগঠন আজ শনিবার জরায়ুমুখ ক্যানসার এর সচেতনতা দিবস পালন করবে।গত ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছরের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শনিবার দিবসটি পালন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে, "আপনার কিশোরী কন্যাকে একটি এইচপিভি টিকা দিন"। সংগঠনগুলো আলোচনা সভাসহ আজ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।
ইপিআইয়ের এই কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মওলা বকস্ চৌধুরী বলেন যে, টিকার প্রাপ্যতার ভিত্তিতে গত জুলাই থেকে দেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের এইচপিভি টিকা দেওয়ার কথা ছিল।তবে কোভিড ১৯ এর টিকা নিয়ে বিশ্ব এখন খুবই ব্যস্ত।এই অবস্থায় টিকা না পেলে কর্মসূচি দেরিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।একজন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছে কি না, তা ১০ বছর আগে ভায়া (ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন অব দ্য সারভিক্স উইথ অ্যাসিটিক অ্যাসিড) টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
আমাদের দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারের চিত্র:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির গ্লোবোক্যান গত ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আক্রান্তের দিক দিয়ে দেশে সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার পঞ্চম স্থানে রয়েছে।প্রতি বছরে আক্রান্ত ৮ হাজার ২৬৮ জন, মারা যায় ৪ হাজার ৯৭১ জন।ক্যানসারে মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম তম।নারীরা স্তন ক্যানসারের পর সবচেয়ে বেশি যে রোগে ভুগছেন তা হল জরায়ুমুখের ক্যানসার।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান, ঘন ঘন সন্তানধারণ, মাসিকের সময় জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় না রাখা, অপুষ্ট দেহে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, নারী ও পুরুষের একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মেলামেশা থেকে জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অনেক ঝুঁকি থাকে।
কাজে লাগাতে হবে বেসরকারি সংগঠনগুলোকে: এইচপিভি ৬, এইচপিভি ১১, এইচপিভি ১৬ ও এইচপিভি ১৮ জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এইচপিভি ১৬ ও এইচপিভি ১৮ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। পাইলট প্রকল্পে গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইনের (জিএসকে) "সারভারিক্স" এইচপিভি টিকা দেওয়া হতো। এটি বাইভ্যালেন্ট বা এইচপিভি ১৬ ও এইচপিভি ১৮ প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। জেএসকে দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। বেসরকারিভাবে হেলথ কেয়ার ‘গার্ডেসিল’ নামে এইচপিভি টিকা আমদানি করত দেশে, যা টেট্রাভ্যালেন্ট বা চারটির ক্ষেত্রেই প্রতিষেধকের কাজ করে। এটিও এখন দুষ্প্রাপ্য, দামও বেশি। ভিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবারও সারভারিক্স টিকা দেওয়া হবে।
মার্চ ফর মাদারের প্রধান সমন্বয়কারী এবং জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন যে, দেশে সরকারিভাবে এইচপিভি টিকা শুরুর আগে ব্যাপক জনসচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।লক্ষ্য অর্জনে ক্যানসার নিয়ে যেসব বেসরকারি সংগঠন কাজ করে, তাদের টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।এইচপিভি টিকার অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ, এ তথ্যটুকু ছাড়া এই কর্মসূচির কোনো তথ্য বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়নি।জনাব হাবিবুল্লাহ আরও বলেন যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকার আওতায়, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য থেকে অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে। ১৫ বছরে স্ক্রিনিং ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি নয়। স্ক্রিনিং যেভাবে অতি কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে, তাতে ১০০ বছরেও লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেদন তিনি।